জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে, রায়ের দিন থেকেই দলটি সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে নামবে; শুরু করবে ‘অলআউট’ কর্মসূচি। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে এমন পরিকল্পনার কথা।
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে দলের প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। উপরোল্লিখিত মামলাগুলোতে খালেদা জিয়ার সাজার রায় হলে কতটা কঠোর কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে এবং সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীরা কতটুকু প্রস্তুত শীর্ষনেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। সেখানে একটি বিষয়ে সবাই মতৈক্যে পৌঁছেন যে, এবারের আন্দোলনে সর্বোচ্চ শক্তি কাজে লাগাবে বিএনপি এবং আন্দোলনকালে কোনো নেতা দলের সঙ্গে বেইমানি করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এমন নেতাকে যেন মাঠপর্যায়ে প্রতিহত করা হয়, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে সেই বার্তাটিও পৌঁছে দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। নেতারা জানান, এ বিষয়ে অনড় খালেদা জিয়া। আলোচনায় তিনি বলেছেন বেইমানি করলে শাস্তি হবেই।
জানতে চাইলে গত সোমবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তাতে সাজা হওয়ার কোনো গ্রাউন্ড নেই। এর পরও রাজনৈতিক উদ্দেশে সাজা দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। একটা কথা বলি খালেদা জিয়ার সাজা হবে আর আমরা বসে থাকব এটি ভাবেন কী করে?
দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসবেন। কত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করবে সরকার? যে উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে চাইছে সরকার, তা সফল হবে না। তাকে বাদ দিয়ে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এটিই শেষ কথা।
সূত্রমতে, বিএনপির বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কোন কোন নেতা ভূমিকা রেখেছেন এবং এখনো দলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এমন পরীক্ষিত নেতার একটি তালিকা হচ্ছে। আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে তাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারাই কেন্দ্রের বার্তা সততার সঙ্গে তৃণমূলে পৌঁছে দেবেন এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। তবে ‘ব্যর্থ’ ঢাকা মহানগরকে এবারও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জানুয়ারির প্রথম দিকে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। যদিও ওয়ার্ড ও থানা কমিটি নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। তাই কাঙ্খিত ফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে নেতাদের। এ মুহূর্তে সারা দেশের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদার নেতাদের নেতৃত্বে ৭৭টি সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। মূল উদ্দেশ্য, আন্দোলনের জন্য তৃণমূলকে প্রস্তুত রাখা।
বিশেষ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে, যা প্রায় শেষের দিকে। ফলে নতুন বছরের যে কোনো সময় রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপির আশঙ্কা, সরকারের চাপে মামলার রায়ে সাজা হতে পারে, যেন খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করা যায়। দলের নেতারা মনে করেন, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এটি করতে চাইছে সরকার।
এদিকে এসব মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা না হলেও বিএনপি নতুন বছরের শেষের তিন মাস রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে।
বিএনপি নেতারা জানান, সরকারি দল এখন নিজের ভেতরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাই তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিজেদের ইচ্ছামতো করতে পারবে না। এখানে শুধু বিএনপি নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক অনেক প্রভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি জোরালো আন্দোলন করতে পারে, দেশি-বিদেশি সব শক্তিই নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পক্ষে অবস্থান নেবে।
গত রবিবার মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও আন্দোলনের ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে। নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন আগামী দিনে কর্মসূচি আসবে, এই কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলন, সংগ্রাম, নির্বাচন সব কিছুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সিনিয়র ও মধ্যমসারির নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। অনির্ধারিত এই সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার মামলার রায়পরবর্তী করণীয় এবং সন্দেহভাজন নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। তৎকালে উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন আগামী দিনে যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের একটিই কথা আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনের চেষ্টা করলে পরিণতি খারাপ হবে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, সামনে দলের জন্য কঠিন সময়। তাই দলের সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হাইকমান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেইমানি করলে পরিণতি কী হতে পারে, সেই বার্তাও সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সুত্র : আমাদের সময়
Leave a Reply